Saturday, July 4, 2015

প্রতারকচক্রের নারীরা 'প্রেমিকা' পুরুষরা 'ডিবি

প্রতারকচক্রের নারীরা 'প্রেমিকা' পুরুষরা 'ডিবি

প্রতারকচক্রের নারী সদস্যরা প্রথমে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর শারীরিক সম্পর্ক। আর সেই আপত্তিকর দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করে পুরুষ সদস্যরা। এরপর 'ডিবি' পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভিডিও চিত্র প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছে চাঁদা আদায়। এভাবেই চলে তাদের প্রতারণার ব্যবসা। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নারীসহ এই চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব-১। রাজধানীর দক্ষিণখান ও উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলো- খায়রুল আলম ওরফে রবিউল (৪২), পান্নু মিয়া (৩৫), সাইফুল ইসলাম নিলয় (২৫), খাইরুল ইসলাম মনির (৩২), শামীমা আক্তার তৃষ্ণা (২৭) ও উম্মে তাসনিন ইভা (১৯)। আটক করার সময় তাদের কাছ থেকে দুটি হ্যান্ডকাফ, তিনটি পুলিশের আইডি কার্ড, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি ক্যামেরা, ভিকটিমের চারটি আপত্তিকর ছবি, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ২২ হাজার ৪৫০ টাকা, ৯টি মোবাইল ফোন ও একটি লাঠি জব্দ করা হয়।
র‌্যাব ১-এর উপ-অধিনায়ক লে. কমান্ডার কাজী মো. সোয়াইব জানান, আটককৃতরা দীর্ঘদিন ধরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণের পর সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আপত্তিকর ছবি তুলে চাঁদা আদায় করে আসছিল। এরই ধারাবাহিতকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে চক্রটি ফায়দাবাদ মজিবর মার্কেট শারমিন টেলিকমের সামনে এক ব্যক্তিকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করার সময় রাত সাড়ে ১১টায় খায়রুল ওরফে রবিউল ও তার সহযোগী পান্নুকে আটক করেন র‌্যাব সদস্যরা। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের উত্তরা গার্লস হাইস্কুলের সামনে থেকে সাইফুল ইসলাম নিলয়, শামীমা আক্তার তৃষ্ণা ও উম্মে তাসনিন ইভাকে আটক করা হয়।
লে. কমান্ডার সোয়াইব আরো জানান, আটককৃতরা র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে, রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় এ চক্রের নারী সদস্যরা বিভিন্ন অফিস, বাসস্ট্যান্ড, মার্কেট ও খাবার দোকানে বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করত। পরে ছলনার মাধ্যমে মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান করে। মোবাইলে কথোপকথনের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। সম্পর্ক কিছুটা গভীর হলে একপর্যায়ে পূর্বনির্ধারিত ফ্ল্যাটে ওই ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে যায় এবং তার সঙ্গে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। এমন সময় ওই চক্রের পুরুষ সদস্যরা আকস্মিক ওই ঘরে প্রবেশ করে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার দায়ে প্রেমিককে মারধর করে। তারপর ওই ব্যক্তির সঙ্গে ওই নারীর নগ্ন ছবি তুলে তার আত্মীয়স্বজন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের ভয় দেখিয়ে নিয়মিতভাবে চাঁদা আদায় করতে থাকে। কখনো ওই একই নারী ব্যবহার করে বিভিন্ন ফ্ল্যাটে দেহব্যবসা গড়ে তোলে। আবার কখনো এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন পণ্যের সেলস এজেন্ট হিসেবে বিভিন্ন অফিসে গিয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের নম্বর সংগ্রহ করে ওই চক্রের নারী সদস্যদের মাধ্যমে ওই লোকগুলোর সঙ্গে ফোনে সম্পর্ক গড়ে তোলে। সম্পর্ক গড়ার পর একইভাবে তাদের বাসায় নিয়ে জিম্মি করে প্রতারণার মাধ্যমে সর্বস্ব লুট করা হয়। আটক শামীমা আক্তার তৃষ্ণাকে পান্নু মিয়া চাকরির কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরে খায়রুল ইসলামের সঙ্গে অপরাধ জগতে জড়ায় সে। আটক সাইফুল ইসলাম ও উম্মে তাসনিন ইভা স্বামী-স্ত্রী। একসময় এমএলএম ব্যবসা করলেও পরে তারা অর্থের লোভে এই অপরাধ চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়।

No comments:

Post a Comment