Thursday, July 2, 2015

হিন্দি ছবি নিয়ে মামলা, হাজিরা দিলেন দুই পরিচালক



হিন্দি ছবি নিয়ে মামলা, হাজিরা দিলেন দুই পরিচালক


ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানি  ও প্রদর্শনের প্রতিবাদে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ায় পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার ও সহসভাপতি সোহানুর রহমান সোহানের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দি। সেই মামলার হাজিরা দিতেই আজ সকালে  সিএমএম আদালতে যান গুলজার ও সোহান।
আদালত থেকে বেরিয়ে গুলজার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “আমরা সিএমএম কোর্টে হাজিরা দিলাম। লিখিত কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আগামী তারিখে শুনানি শুরু হবে। আমাদের বিরুদ্ধে যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁদের অভিযোগ প্রমাণ করার মতো কোনো কাগজ নেই। এই কারণে আমাদের বিরুদ্ধে তাঁরা কিছু করতে পারবেন না। শুধু মুখের কথায় আইন চলে না। তা ছাড়া আমাদের এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। তখন পাকিস্তানিরা আমাদের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। আর এখন ভারতীয় হিন্দি ভাষার সংস্কৃতি আমদানি করে আমাদের দেশের ঐতিহ্য শেষ করার প্রচেষ্টা চলছে। আমরা যেভাবেই হোক এই আগ্রাসন থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাব।”
এর আগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দির দায়ের করা ১০ কোটি টাকার মানহানি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অভিযুক্ত চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান ও মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজারের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আরেফিন এই সমন সমন জারি করেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে এফডিসির সবগুলো সংগঠন বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, যে করেই হোক ভারতীয় হিন্দি ছবি কিছুতেই বাংলাদেশের হলে চলতে দেওয়া হবে না। শুধু এই ধরনের মামলা নয়, যে কোনো প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে তারা এক হয়ে কাজ করবে। এবং সফল না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।  
মামলার বাদী মিয়া আলাউদ্দি অভিযোগপত্রে বলেন, ‘অভিযুক্ত দুজন বাদীর নামে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, কাল্পনিক, মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানহানিকর দরখাস্ত মুদ্রণ, প্রকাশ ও প্রচার করিবার কারণে একক ও যৌথভাবে দায়ী এবং আসামিরা ইচ্ছকৃত বাদীকে হেয়প্রতিপন্ন করিয়াছেন এবং সুনাম ক্ষুণ্ণ করিয়াছেন ও চরম মানহানি ঘটাইয়া তাহার নিজের ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি ও সমিতির সদস্যদের মারাত্মক ক্ষতিসাধন, হেয় ও মানহানি করিয়াছেন, যাহা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ ও যাহার জন্য তাহাকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে আইনগত বাধ্য বটে। বাদীর ব্যক্তিগত, সামাজিক মর্যাদা, সুনাম, খ্যাতি, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনা করিয়া আসামিগণ ১০ কোটি টাকা ক্ষতিসাধন করিয়াছেন মর্মে স্থির করা হইল।’
২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ভারতীয় ১২টি চলচ্চিত্র আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল। এর মধ্যে হিন্দি নয়টি ও বাংলা চলচ্চিত্র ছিল তিনটি। তবে হিন্দি কোনো চলচ্চিত্র মুক্তি না পেলেও ২০১১ সালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে দেখানো হয়েছিল ভারতীয় বাংলা ছবি ‘জোর’, ‘বদলা ও ‘সংগ্রাম’। এরপর হিন্দি ভাষায় ডন, ওয়ান্টেড, থ্রি ইডিয়টস, মুক্তি পায। তখন থেকেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নেতৃত্বে চলচ্চিত্র ঐক্য জোটের আন্দোলন শুরু হয়। কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় নামে চলচ্চিত্র পরিবার। হলে হলে গিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় হিন্দি চলচ্চিত্র। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দি ছবির আমদানির সঙ্গে যুক্ত প্রদর্শক সমিতির নেতাদের পক্ষে মিয়া আলাউদ্দি এই মামলাটি করেন।

No comments:

Post a Comment