মেয়াদ না বাড়লে চলতি মাসেই নতুন সেনাপ্রধান
সেনাবাহিনীর তৎকালীন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়াকে সেনাপ্রধানের পদে ২০১২ সালের ৭ জুন নিয়োগপত্র দেয়া হয় এবং ওই দিনই আগের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল মুবীনের চাকরির মেয়াদ ২০১২ সালের ১৫ জুন থেকে আরো ১০ দিন বাড়ানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেনাপ্রধান হিসেবে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হলেও পরে এ মেয়াদ বৃদ্ধিরও নজির রয়েছে। বহুল আলোচিত সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ২০০৫ সালের ১৫ জুন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ৩ বছরের মেয়াদে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পেলেও সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ‘জনস্বার্থে’ তার মেয়াদ আরো ১ বছর বাড়ানো হয়। বর্তমান সেনাপ্রধানের মেয়াদ বাড়ানো না বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।
সরকারিভাবে প্রকাশিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সময় জারি করা প্রজ্ঞাপন ও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে প্রথমেই রয়েছেন সেনা সদরের চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম। এর পরে রয়েছেন সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আনোয়ার হোসেন, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের (এনডিসি) কমান্ড্যান্ট লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সরওয়ার্দী (বীরবিক্রম) এবং আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লে. জেনারেল সাব্বির আহমেদ। তবে সাব্বির আহমেদ সম্প্রতি লে. জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সেনাপ্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয় না। অতীতে এক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। জেনারেল মইনকে সেনাপ্রধান নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তার কয়েকজন জ্যেষ্ঠকে ডিঙ্গিয়ে। আগের আওয়ামী লীগ সরকার আমলে অবসরকালীন ছুটিতে থাকা অবস্থায় জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়।
আগের ১৩ জন সেনাপ্রধান : বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আগের প্রধানদের মধ্যে প্রথম কে ছিলেন এ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চালাকালে জেনারেল এমএজি ওসমানী ছিলেন সশস্ত্রবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ। অ্যাসিন্ট্যান্ট কমান্ডার-ইন-চিফ ছিলেন লে. কর্নেল এম আব্দুর রব বীর উত্তম। উইকিপিডিয়াতে কয়েকটি সূত্রের বরাতে এম আব্দুর রবকেই প্রথম সেনাপ্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানায়, মেজর জেনারেল কেএম শফিউল্লাহই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম প্রধান।
মেজর জেনারেল কেএম শফিউল্লাহর নিজেরও দাবি-বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের পদ সৃষ্টি হয় ১৯৭২ সালের ৫ এপ্রিল এবং তাকে ওই পদে প্রথম নিয়োগ দেয়া হয়।’ কেএম শফিউল্লাহ সেনাপ্রধান হিসেবে ১৯৭৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল) ১৯৭৫ সালের জুলাই থেকে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়ই সেনাবাহিনী প্রধানের পদ লেফটেন্যান্ট জেনারেলে উন্নীত করা হয়। লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচএম এরশাদ সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৮৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে এইচএম এরশাদই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সেনাপ্রধানের পদে বহাল থাকেন। ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের আগস্ট পর্যন্ত সেনাপ্রধান ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতিকুর রহমান। এরপর ১৯৯৪ সালের জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল নূরুদ্দিন খান। লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৬ সালের জুন পর্যন্ত। আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিমকে সরিয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমানকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পদে বহাল থাকেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (পরে জেনারেল) মুস্তাফিজুর রহমান সেনাপ্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন ১৯৯৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর এবং ২০০০ সালের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। এরপর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম হারুন-অর-রশিদ ২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০০২ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত এ পদে বহাল থাকেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান মাশহুদ চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন ২০০২ সালের ১৬ জুন থেকে ২০০৫ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত। ২০০৫ সালের ১৫ জুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইন-ইউ-আহমেদ। তার সময়ে সেনাপ্রধানের পদমর্যাদা স্থায়ীভাবে জেনারেলে উন্নীত করা হয় এবং তিনি সে পদবি গ্রহণ করে ২০০৯ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এদিন থেকেই জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়ার আগের সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল মুবীন দেশের ১২তম সেনাপ্রধান হিসেবে ৩ বছরের মেয়াদে নিয়োগ লাভ করেন।
No comments:
Post a Comment