Sunday, February 28, 2021

ফের ভোট বর্জনের পথে বিএনপি, ‘যাচ্ছে না’ ইউপি নির্বাচনে

 পৌরসভাসহ সাম্প্রতিক স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নিলেও আসছে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

 

 

নির্বাচন ‘নিরপেক্ষ’ হচ্ছে না বলেই এই সিদ্ধান্ত বলে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, এটা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত।

২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি বিভিন্ন নির্বাচন বর্জন করলেও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছিল।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট চুরির অভিযোগ তুললেও পরে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে অংশ নিয়ে যাচ্ছিল দলটি। 

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিল। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তের ফলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক দেখা যাবে না।

ফখরুল বলেন, “আমরা মনে করেছিলাম যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এখানে অন্তত সরকার একটা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করবেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

“কিন্তু এখন পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদসহ পৌরসভা-উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে যা হয়ে্ছে, এত ফ্রাসট্রেটিং যে, আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদের অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি আমরা দলীয়ভাবে।”

আগামীতে সব নির্বাচনেই বর্জন করবেন কি না- প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা আমাদের স্ট্যাডিং কমিটির সিদ্ধান্ত হলে আপনাদেরকে জানাব।

“এখন পর্যন্ত আমাদের পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আমরা আর দলগতভাবে যাচ্ছি না। ইউনিয়ন পরিষদে আমাদের দলের কাউকে মনোনiয়ন আর দিচ্ছি না।”

এতদিন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই চরম প্রতিকূল অবস্থায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

“সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করবার যোগ্য নয়। বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই এই নির্বাচন কমিশনের কাজ।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ফখরুল।

শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে মহাসচিব ফখরুল ছাড়াও ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

 

Wednesday, February 24, 2021

জিয়ার রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জামুকা

 জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। জামুকার সদস্য ও সাংসদ মোশাররফ হোসেনকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সাংসদ শাজাহান খান ও মো. রশিদুল আলম। তাঁরাও জামুকার সদস্য। ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জামুকার ৭২তম সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।


জামুকা যেসব অপরাধের জন্য জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সংবিধান লঙ্ঘন, সংবিধানের মূলনীতি বাতিল, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের মদদ দেওয়া ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা, বিভিন্ন সময় আত্মস্বীকৃত খুনিদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ, আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততামূলক বক্তব্য উল্লেখ থাকা, তাঁদের দেশত্যাগে সহায়তা ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন এবং মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধী লোকজন নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন।


সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করে সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্য। এ হত্যার ষড়যন্ত্রে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে বরাবরই অভিযোগ করা হয়।


জামুকার তিন সদস্যের কমিটি জিয়াউর রহমান ছাড়াও ’৭৫–এর পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা খুনি খন্দকার মোশতাক আহমদ, মাহবুবুল আলম চাষীসহ অন্যদের এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের (মুক্তিযোদ্ধা) বিষয়ে তথ্য–প্রমাণ উপস্থাপন করবে। তবে কত দিনের মধ্যে কমিটি এসব কাজ করবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি।


কমিটির প্রধান সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ও সদস্য শাহজাহান খান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও শাজাহান খান। কমিটির আরেক সদস্য সাবেক সচিব রশিদুল আলম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফের ভাই।

জিয়ার খেতাব বাতিলের বিষয়ে গঠিত কমিটির প্রধান মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। সেই ব্যক্তি খেতাবধারী থাকবেন তা তো মেনে নেওয়া যায় না। এ জন্যই তাঁর রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কে কতটুকু অবদান রেখেছেন, তা তাঁর জানা আছে। জিয়ার ‘বীর উত্তম’ খেতাব নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।


কমিটির কাজের বিষয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সিদ্ধান্ত তো হয়েই আছে, এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা।’ জিয়াউর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা সনদও বাতিল হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুধু খেতাবটাই আপাতত বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা থাকবেন।’


এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি জামুকার সভায় জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরীফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করা হয়। ওই সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ‌বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের আত্মস্বীকৃত খুনিদের পদক বা খেতাব বাতিলের আলোচনাকালে একপর্যায়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান, বীর উত্তমের খেতাব বাতিলের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ওই সভায় বীর উত্তম খেতাব বাতিলযোগ্য বলে সবাই একমত পোষণ করেন।

২০০২ সালের জামুকা আইন অনুযায়ী, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন, সনদপত্র ও প্রত্যয়নপত্র প্রদানে এবং জাল ও ভুয়া সনদপত্র ও প্রত্যয়নপত্র বাতিলের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ’–এর কথা বলা আছে।


স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব হঠাৎ করে বাতিলের সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক ও উদ্দেশ্যমূলক বলছে বিএনপি। জামুকার এখতিয়ার নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। বিএনপি নেতারা মনে করেন, জামুকা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের ইস্যুটি সামনে এনেছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রথম আলোকে বলেছেন, জামুকার দায়িত্ব প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা এবং রাষ্ট্র তাদের যে সুযোগ-সুবিধা দেয়, তা পাওয়ার ব্যবস্থা করা। সেনাবাহিনীর কোনো কর্মকর্তার খেতাব বাতিল করা তাদের কাজ নয়। তারা সেটি করতেও পারে না।


খেতাব বাতিলসংক্রান্ত জামুকা গঠিত কমিটির সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রশিদুল আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কোনো কমিটিতে থাকব না। আমাকে কার্যবিবরণীও পাঠানো হয়নি।’ তিনি বলেন, জামুকার ৭২তম সভায় জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বেশি আলোচনা হয়নি। আলোচনায় তিনি বলেছেন বিষয়টি জটিল হবে।

আত্মসমর্পণের পর জামিন পেলেন মিলা

 জনপ্রিয় পপ গায়িকা মিলা ইসলাম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন। অ্যাসিড হামলার মাধ্যমে হত্যাচেষ্টার অভিযোগের মামলায় দশ হাজার টাকার মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।


আজ বুধবার মিলা তার আইনজীবীর মাধ্যমে ঢাকার অ্যাসিড অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। পরে ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিদারা চদ্রনা তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারক মিলা ও তার সহযোগী কিম জন পিটার হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ জুন এ সংগীতশিল্পীর বিরুদ্ধে অ্যাসিড হামলার অভিযোগে মামলা করেন সাবেক স্বামী পারভেজ সানজারির বাবা এস এম নাসির উদ্দিন।